ই-কমার্স সাইটগুলো অনলাইন ব্যবসার প্রাণশক্তি। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায় মুনাফা কিংবা লাভের মুখ দেখতে পান, আবার অনেক ব্যবসায়ী এই মুনাফার মাধ্যমেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। যেহেতু ই-কমার্স সাইট থেকে যে কয়জন পণ্য কিনে তার হিসেবই লভ্যাংসের পরিমাণ করা হয়, তাই আপনার সাইটটি সবচেয়ে ভালো পারর্ফম করে গ্রাহকদের কাছে পণ্য বিক্রি করতে পারছে কিনা তা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি নিচের কাজগুলো করে আপনার ওয়েবসাইটের পারফর্মেন্স অনেকাংশে বৃদ্ধি এবং দ্রুত ব্যবহারকারীদের কাছে লোড হওয়া নিশ্চিত করতে পারেন। চলুন দেখে নেওয়া যাক কি কি করলে আপনার ওয়েবসাইটের গতি ৫ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।
১. ছবি টুইক করেঃ ব্যবহারকারীদের ডিভাইসে ছবি তাড়াতাড়ি লোড করার ক্ষেত্রে আপনি ওয়েবপেজে ছবিগুলো অপটিমাইজ করে নিতে পারেন। এটি আপনি বিভিন্নভাবে করতে পারেন। যেমন, ফাইলের আকার ছোট করে, ছবিগুলোর বর্ণনা দিয়ে (যেটা “অল্ট টেক্সট” নামেও পরিচিত), কিংবা ছবির আকার 'TinyPNG' অথবা 'JPEGmini’ মাধ্যমে সংকোচন করে।
যদি আপনার ওয়েবপেজে কোন ছবি অস্পস্ট কিংবা ঝাপসা দেখায় তাহলে সেই ছবিটিকে ওয়েবপেজের অন্য পাশে সরিয়ে দেখুন। কখনো কখনো আপনি ছবিগুলোকে ওয়েবপেজ থেকে আলাদা ফাইলে রেখেও তার লোড হওয়ার গতি বাড়াতে পারেন।
২. ওয়েবপেজের আকার হ্রাস করেঃ বিশেষ করে যেই ওয়েবসাইটগুলোতে প্রচুর ছবি কিংবা ভিডিও রয়েছে সেখানে ওয়েবপেজের আকার কমিয়ে দ্রুত লোড করা সম্ভব। এটা ওয়েবপেজের গতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো উপায়।
৩. HTTP রিকোয়েস্ট কমিয়ে: আপনার সাইটটি কত তারাতাড়ি লোড হয়, এবং প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়ার জন্য কত কম HTTP রিকোয়েস্ট করতে হবে, তার ভিত্তিতে গুগল আপনার ওয়েবপেজ মূল্যয়ন করে থাকে। এগুলো যত তারাতাড়ি কিংবা কম সময়ে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে, গুতল তত বেশি আপনার সাইট পছন্দ করে থাকবে।
৪. সার্ভারের গতি বাড়িয়েঃ যদি আপনি ওয়েবপেজ আরো দ্রুত লোড করতে চান, তাহলে সার্ভারের গতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে আপনার নজর দেওয়া উচিত। আপনি নতুন এবং আরো গতিশীল কোন সার্ভারের সাথে, কন্টেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক (CDNs) বা ক্লাউড হোস্টিং আপনার ওয়েবপেজে সংযুক্ত করে এটিকে ব্যবহারকারীদের কাছে আরো দ্রুত গতির করে তুলতে পারেন ।
৫. সাইটের ক্যাশিং উন্নত করে: আপনার ওয়েবপেজের গতি বাড়ানোর অন্যতম উপায় হলো ওয়ার্ডপ্রেসের ক্যাশিং উন্নত করা। এটার মধ্যে রয়েছে অ্যাসেটগুলোর মেয়াদউত্তীর্ণের তারিখ নির্ধারণ করা, যার ফলে পরবর্তীতের ব্যবহারকারীদের কাছে আপনার ওয়েবপেজ আরো দ্রুত লোড হবে।
৬. XMLHttp রিকোয়েস্ট কমিয়েঃ আপনার ওয়েবপেজের কোন অ্যাসেটগুলোতে XMLHttp রিকোয়েস্ট রয়েছে তা খুঁজে বের করার অনেকগুলো সফটওয়্যার রয়েছে। আপনি সেগুলো খুঁজে বের করে, আপনার ওয়েবসাইটের কার্যক্ষমতা বাড়াতে পারেন।
৭। অপ্রয়োজনীয় প্লাগইন ব্যবহার না করেঃ আপনি আপনার সাইট থেকে অপ্রয়োজনীয় প্লাগইন কিংবা অব্যবহৃত থিমগুলো সরিয়ে ফেলে এটির পার্ফরমেন্স বাড়াতে পারেন। যদি আপনি একটি ভালো মানের ই-কমার্স প্লাগইন কিংবা শপিং কার্ট প্লাগইন অথবা এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিছু কিনতে চান, তাহলে লক্ষ্য রাখবেন যেন সেটি বেশ পরিচিত হয় এবং তাতে সক্রিয় ডেভ বিদ্যমান রয়েছে।
৮. প্রাথমিক লোড হওয়ার সময় কমানোঃ আপনার সাইটে কিছু প্রদর্শন করার আগে, গুগল দেখতে চায় যে সেখানে প্রচুর তথ্য লোড হচ্ছে কিনা। তাই, আপনার ওয়েবসাইটটিতে শুরুতেই প্রচুর তথ্য এবং ডেটা লোড হয়েছে তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ যাতে তারা যখন চেক করে তখন তাদের দেখার জন্য প্রচুর জিনিস থাকে।
৯. ওয়েবপেজের গতি ব্যবহার করেঃ অনেক ওয়েব হোস্টিং প্রদানকারী এই পরিষেবা চালু করেছে। এটি Google পেজ স্পিড ইনসাইটস (যা আমরা এখানে WSO-তে ব্যবহার করি), বা WebPageTest এবং Pingdom এর মতো টুল ব্যবহার করে করা হয়।
১০. সার্ভার সঠিকভাবে অপ্টিমাইজ করেঃ আপনার ওয়েবসাইটের সার্ভার সেটিংস অপ্টিমাইজ করতে আপনি করতে পারেন এমন জিনিসগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ
ওয়েব সার্ভার (Apache, Nginx, বা CPanel) সঠিকভাবে ইন্সটল করার পর গুগলকে জানাতে হয় যে আপনি ওয়েবসাইটটির স্বত্ত্বাধিকারী, আর এটি করতে পারেন আপনার ওয়েবপেজের ডোমেইন নেম পরিবর্তন করে (আপনার ডোমেন এর ডিফল্ট ডিএনএস সার্ভার পরিবর্তন করে)। যাতে আপনি আরও কার্যকরভাবে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো পরিচালনা করতে পারেন, যেমন প্রয়োজনীর সফটওয়্যারগুলো চালাতে পিএইচপি স্পুল এবং মডিউল ইন্সটল করে, Apache বা Nginx-এ ক্যাশিং সুবিধা সক্রিয় করা।
১১. সাইটের কার্যক্ষমতা বাড়িয়েঃ যদি আপনি গুগল কিংবা আপনার ওয়েবসাইট যারা নিয়মিত ভিজিট করে থাকেন তাদের উপর ভালো প্রভাব ফেলতে চান তাহলে আপনার ওয়েবসাইটের পারফর্মেন্সের উন্নতির দিকে মনোযোগী হওয়া উচিত।
১২. আপনার সাইটের লোড হওয়ার সময় কমিয়ে: আপনার সাইটের লোড হওয়ার সময় কমানোর জন্য আপনি ওয়েবপেজের ছবিগুলিকে অপটিমাইজ করে, অব্যবহৃত ছবিগুলোকে পেজ থেকে মুছে ফেলে কিংবা ছবির আকার সংকুচিত করে তা করতে পারেন, এতে আপনার ওয়েবপেজ আরো দ্রুত লোড হবে।
১৩. মোবাইলের জন্য সাইটের গতি বাড়িয়েঃ আপনার ওয়েবসাইটটির ডেস্কটপ সংস্করণের পাশাপাশি মোবাইলের জন্য অপটিমাইজ বা দ্রুত করে তোলা বেশ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি গ্রাহকদের আপনার ওয়েবসাইটের প্রতি আকৃষ্ট করে পণ্য কিনতে সাহায্য করে।
১৪. SEO এর মাধ্যমে আপনার সাইটের র্যাংকিং বাড়িয়েঃ গুগল কিংবা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে আপনার ওয়েবসাইটের র্যাংকিং ভালো করতে চাইলে SEO এর কোন বিকল্প নেই। এটি আপনার ওয়েবসাইটের পারফর্মেন্স বৃদ্ধি করার পাশাপাশি আপনাকে দীর্ঘ সময় ধরে সুবিধা দেবে।
যদি আপনি আপনার ওয়েবসাইটের পারফর্মেন্স বাড়ানোর জন্য আরো ধারণা চান তবে নিচের আর্টিকেলটি দেখুন।
১. সাইটের হোস্টিং আপডেট করেঃ যদি আপনার হোস্টিং প্ল্যান কয়েক বছরেরও বেশি পুরনো হয় তাহলে আরো গতি এবং অধিক সুরক্ষার জন্য আপনার এটিকে আপডেট করে নেওয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি বর্তমানে শেয়ারকৃত হোস্টিং ব্যবহার করে থাকেন তাহলে VPS বা ডেডিকেটেড হোস্টিং এ আপডেট করলে আপনার ওয়েবসাইটের গতি এবং কার্যক্ষমতা উভয়ই অনেকাংশেই বৃদ্ধি পাবে।
২. আপনার ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করেঃ আপনার ওয়েবসাইট কেমন পারফর্ম করছে তা পর্যবেক্ষণ করার ক্ষেত্রে WSO বেশ চমৎকার একটি উপায়। আমাদের কাছে অনেক প্রকারের সফটওয়্যার রয়েছে যার মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটের কোন জিনিসগুলো লোড হওয়ার সময়কে প্রভাবিত করে ধীরগতির করে তুলছে তা নির্দিষ্ট করা সম্ভব হবে, এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কি করলে ওয়েবসাইটের কার্যক্ষমতা বা গতি বৃদ্ধি পাবে তা আপনার নিকট তুলে ধরবে।
৩. কন্টেন্ট ডেলিভারী নেটওয়ার্ক (CDN) ব্যবহার করেঃ যদি আপনি একটি থার্ড-পার্টি হোস্টিং ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আপনার ওয়েবসাইটের পারফর্মেন্স এবং সার্ভারের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করতে CDN ব্যবহার করা অত্যাবশ্যক
৪. গুগলের পেজস্পিড ইনসাইট ব্যবহার করেঃ যদি আপনি WSO ব্যবহার করতে না চান তাহলে আপনার ওয়েবসাইটের পারর্ফমেন্স কেমন তা যাচাই করার জন্য গুগলের পেজস্পিড ইনসাইটের তুলনায় ভালো কোন উপায় নেই। এটি আপনার সাইটটির কার্যক্ষমতা কেমন তা সম্পর্কে একটি সৎ মতামত দেবে। পেজস্পিডের সাহায্যে আপনি মোবাইল কিংবা ডেক্সটপের ব্রাউজারে URL প্রবেশ করানোর মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইট কেমন পারফর্ম করছে তার ফলাফল দেখতে পারবেন। আপনার ওয়েবসাইটের কি কি বিষয়ে উন্নতি করা প্রয়োজন সে সম্পর্কেও ধারণা পাবেন এখান থেকে।
৫. গুগল অ্যানালিটিকস ব্যবহার করেঃ আপনি যখন পেজস্পিড ইনসাইট ব্যবহার করছেন তখন আপনার একবার গুগল অ্যানালিটিকসও ব্যবহার করে দেখা উচিত। আপনি যদি পরিমাপ না করেন, তাহলে সেটার কতটুকু উন্নতি হলো তা বুঝতে পারবেন না। এটি আপনার ওয়েবসাইটে কতজন ভিজিট করছেন এবং তার মধ্য থেকে কতজন আপনার পণ্য কিনছেন তার হার দেখাবে।
৬. রিকোয়েস্ট কমিয়েঃ কখনো কখনো আপনার সাইট দ্রুত লোড হলেও সেখানে অনেকগুলো HTTP রিকোয়েস্টের সাথে লোড হয়, যা আপনার সাইটকে কিছুটা ধীরগতির করে তোলে তথা নেতিবাচক একটি প্রভাব ফেলে সেখানে। যদি সম্ভব হয় তবে আপনার কোডগুলো অপটিমাইজ কিংবা রিসোর্সগুলো (যেমনঃ ছবি) একত্রিত করে এই রিকোয়েস্টগুলোকে কমিয়ে ফেলতে হবে।
৭. সার্ভারের রেস্পন্স টাইম কমিয়েঃ অনেক মানুষই উপলব্ধি করতে পারেনা কয়েক মিলিসেকেন্ড কিভাবে একটি বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। সার্ভারের রেসপন্স টাইম যদি কমানো যায় তাহলে এটি বেশ ভালোভাবে আপনার সাইটটিকে গতিশীল করে দিতে পারে।
৮. লোডিং এর সময় হ্রাস করেঃ যদি এমন কিছু থাকে যেটা ইউজার এক্সপেরিএন্সের পর ব্যবহারকারীদের উপর একটি ভালো প্রভাব ফেলতে পারে তা হলো ওয়েবপেজের প্রতিটি সাইট যদি খুব দ্রুত লোড হয়। অতএব, আপনি যদি ব্যবহারকারীর মনে একটি ভালো প্রভাব ফেলতে চান তাহলে আপনার উচিত এটি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে আপনার ওয়েবপেজের লোডিং টাইম কমানো।
৯. সার্ভার ফুটপ্রিন্ট কমানোঃ অনেকেই জানেনা যে তাদের সার্ভারের ফুটপ্রিন্ট কতটা বিশাল হতে পারে। এটি যত বড় হয় তত আপনার ওয়েবপেজের লোডিং টাইমের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই আপনার ওয়েবপেজের ফোল্ডার এবং ফাইলের আকার ছোট করা অত্যাবশ্যকীয়। ফলে এটি আপনার মেমোরির অনেক জায়গা খালি করে আপনাকে আরো বেশি জায়গায় জুড়ে কাজ করার সুযোগ করে দেয়।
১০. ডেটা ট্রান্সফার মিনিমাইজ করেঃ আপনার সাইটটিকে খুবই ধীরগতির করে তোলার প্রধান কারণ হলো যতগুলো ডেটা আপনার সার্ভারে প্রবেশ করছে কিংবা বের হচ্ছে সেটি। যেহেতু বেশিরভাগ সাইট ওয়ার্ডপ্রেসের মাধ্যমে তৈরী হয়ে থাকে তাই এটি খুব সহজে অপটিমাইজ করে আপনার সাইটটিকে দ্রুতগতির করে ফেলা সম্ভব।
১১. ডিজাইন থেকে কন্টেন্ট আলাদা করেঃ আপনার ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড বাড়ানোর জন্য অন্যতম একটি উপায় হলো ডিজাইন থেকে কন্টেট আলাদা করা। এটি CSS ব্যবহার করে করা হয়ে থাকে।
১২. CSS স্পিরিট ব্যবহার করেঃ CSS স্পিরিট ব্যবহার করলে এটি আপনার সাইটে HTTP রিকোয়েস্টর সংখ্যা কমাতে সাহায্য করে। এটি অনেকগুলো অ্যাসেটকে একটি ফাইলের মধ্যে একত্রিত করে আপনার ওয়েবপেজে কলে’র সংখ্যা হ্রাস করে।
১৩. ইনলাইন CSS ব্যবহার করেঃ ইনলাইন CSS ওয়েবসাইটে ব্যবহার করে ওয়েবসাইটটিকে আরো অপটিমাইজ করে তোলা যায়। (প্রতিটা এলিমেন্টের জন্য আলাদা ইন-লাইন স্টাইল)