আমাদের জীবনে ই-কমার্সের গুরুত্ব - ১৫টি সুবিধা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
আজকের বিশ্বে, ইন্টারনেট মানুষ এবং ব্যাবসায়িক পণ্যের মধ্যে একটি শক্তিশালী মেলবন্ধন হিসেবে রয়েছে। ই-কমার্সের মাধ্যমে কয়েক যুগ ধরে কোম্পানিগুলো তাদের ব্যাবসা পরিচালনা করে আসলেও এটির জনপ্রিয়তা সম্প্রতি বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে বড় ধরণের পরিবর্তন এনেছে। আজকাল প্রায় সব বড় কোম্পানিগুলো তাদের অফলাইন দোকানের পাশাপাশি অনলাইন দোকান বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিক্রি করা শুরু করেছে, যেখানে গ্রাহকরা তাদের বাড়িতে বসেই পছন্দমত ডিজিটাল কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় যেকোন কিছু কিনতে পারেন।
ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ই-কমার্সের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে ই- কমার্সের মাধ্যমে মানুষের পণ্য কেনার প্রবণতা বাড়ছে। বর্তমানে, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকায় এবং আধুনিক প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির সাথে এই ধরনের ক্রেতার সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ই-কমার্স আপনাকে আপনার খরচ কমাতে সাহায্য করে
ব্যবসার জন্য ই-কমার্সের প্রধান সুবিধা হল এতে ব্যায়ের খরচ হ্রাস পায়। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বিপণন সম্ভব হওয়ায় আপনি সরাসরি ক্রেতাদের কাছে আপনার পণ্য বিক্রি করতে পারেন। বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে কেনাকাটা সহজ এবং সুবিধাজনক হয়ে ওঠায় মানুষ কেনাকাটার জন্য ধীরে ধীরে এর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। যেহেতু অনলাইনে আপনার দোকানের জন্য আলাদা ভাড়া প্রদান করতে হয়না, তাই আপনি সহজেই আপনার কর্মীর সংখ্যা কিংবা দোকানে পণ্যের পরিসর বৃদ্ধি করতে পারেন। এখানে প্রতিটি বিক্রয়ে কমিশনও প্রদান করতে হয়না, যাতে আপনার প্রচুর অর্থ সাশ্রয় হয়। ই-কমার্সের মাধ্যমে পণ্য গ্রাহকদের নিকট পৌছে দিতে খরচ অনেকাংশেই কমে যায় কারণ এই পণ্যগুলো সরাসরি গ্রাহকদের নিকটস্থ বিতরণ কেন্দ্র থেকে পৌছে দেওয়া সম্ভবপর হয়।
ই-কমার্সের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোন প্রান্তের পণ্য আপনার নিকট পৌছানো সম্ভব
ইন্টারনেট বিশ্বব্যাপী একটি বিপনন ব্যবস্থা তৈরী করেছে যার মাধ্যমে আপনার পণ্য বিশ্বের যেকোন প্রান্তের ক্রেতার কাছে পৌছানো সম্ভব। বর্তমানে আপনার এলাকায় কিভাবে পণ্যের বিক্রি বাড়াবেন শুধু সেদিকে নজর রাখতে হবেনা, কারণ বিশ্বের সব ইন্টারনেট ব্যবহারকারীই প্রকৃতপক্ষে আপনার ক্রেতা। আপনি যদি বিশ্বব্যাপী চাহিদা রয়েছে এমন পন্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করেন তাতে আপনার মুনাফার পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে। বিশ্বব্যাপী মানুষদের কাছে আপনার পণ্য পৌছানোর ফলে আপনি আরো অধিক মানুষের কাছে অধিক পণ্য বিক্রি করতে সক্ষম হবেন, যার মাধ্যমে আপনার আয়ের পরিমাণও বাড়বে সে অনুপাতে।
ই-কমার্স বিশ্বব্যাপী আপনার দোকানের কিংবা কোম্পানির পরিচিতি তৈরি করতে সাহায্য করে
ই-কমার্সের প্রধান সুবিধাগুলির মধ্যে একটি হল বড় একটি এলাকাজুড়ে আপনার কোম্পানির পরিচিতি তৈরি করার ক্ষমতা। ঠিক যেমন একটি ব্যবসায়িক কার্ড আপনার ব্যবসার প্রচারে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ঠিক তেমনি আপনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনি আপনার কোম্পানির লোগো, পণ্য এবং বিভিন্ন পরিসেবা গ্রাহকদের নিকট প্রচার করতে পারেন। অনলাইনে অধিক সক্রিয়তার মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিন আপনার ওয়েবসাইট আরো ব্যবহারকারীদের কাছে পৌছে দেবে, যাতে আরো বেশি লোক আপনার কোম্পানি সম্পর্কে জানতে পারবে।
ই-কমার্স আপনার মোট আয় বাড়াতে সাহায্য করে
ই-কমার্সের মাধ্যমে খুচরা বিক্রেতারা তাদের আয় অনেকাংশে বাড়াতে পারে (কয়েকটি গবেষণা অনুসারে ২০% পর্যন্ত)। বিশ্বজুড়ে আরও গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যমে, আপনি আপনার ব্যবসার পরিধি বাড়াতে সক্ষম হবেন। এখন আপনার পণ্য শুধুমাত্র স্থানীয় ক্রেতাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেনা। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি অস্ট্রেলিয়ায় বাস করে আমেরিকা কিংবা আরো দূরবর্তী দেশে গয়না বিক্রি করতে চান, ই- কমার্সের সাহায্যে খুব সহজেই তা করতে পারবেন।
ই - কমার্স উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে:
বর্তমানে ইন্টারনেট উদ্ভাবনের একটি কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে যেখানে হাজার হাজার মানুষ তাদের নতুন আইডিয়া নিয়ে হাজির হয়, এমনকি বড় কোম্পানিগুলো নতুন আইডিয়ার জন্য বিভিন্ন উপায়ে মানুষের দ্বারস্থ হয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে গ্রাহকদের সংযুক্ত করার ফলে ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে আরো দ্রুত প্রতিক্রিয়া পেতে সক্ষম হন, যা তাদের পণ্যের মান বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ই-কমার্স আপনাকে আরও প্রতিযোগিতামূলক হতে সাহায্য করে
ই-কমার্সের জন্য বিশ্বব্যাপী অনেক নতুন কোম্পানির আবির্ভাব ঘটেছে, যা কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করেছে। এর ফলে তাদের পণ্যের মান বাড়িয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হচ্ছে। ফলে যেসব কোম্পানি ভালো সেবা প্রদান করেনা তারা সহজেই এই প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ই-কমার্সের বিস্তৃতির ফলে গ্রাহকদের বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে তুলনা করে সেখান থেকে ভালো মানের পণ্য কেনা সহজতর হয়ে পড়ছে।
ইকমার্স আপনার গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ায়
ই-কমার্স কোম্পানিগুলো আপনার ব্যাবসার পরিসর বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। গ্রাহকরা এখন সামান্য মাউসের ক্লিকে দিনের যেকোন সময় বিভিন্ন ধরনের পণ্য ক্রয় করতে পারছেন। অর্থাৎ এখন আর বিক্রেতাদের ফোন কিংবা মেইলের মাধ্যমে গ্রাহকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে পণ্য কেনা-বেচা করতে হচ্ছেনা। ই-কমার্সের মাধ্যমে মানুষ তাদের পছন্দের পণ্য ঘরে বসেই অর্ডার দিতে পারছেন এবং ততক্ষণ তারা দুশিন্তামুক্ত হয়ে ঘরে বসে আরাম করতে পারেন।
ইকমার্স আপনাকে গ্রাহকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে
গ্রাহকরা আপনার ওয়েবসাইটে আপনার পণ্যগুলোর সম্পর্কে মন্তব্য করতে পারে, এই মন্তব্যগুলো আবার অন্যান্য গ্রাহকরাও দেখতে পারেন, যার মাধ্যমে সেই কোম্পানির সাথে গ্রাহকদের একটি ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এটা দেখায় যে আপনি গ্রাহকদের মতামতের প্রতি যত্নশীল, যা গ্রাহকদের পুনরায় আপনার থেকে পণ্য কিনতে উৎসাহ প্রদান করে।
ই কমার্স আপনাকে খরচ কমিয়ে মুনাফা বাড়াতে সাহায্য করে
ইন্টারনেটের মাধ্যমে যারা তাদের পণ্য বিক্রি করে আসছে, নাটকীয়ভাবে তাদের ব্যবসার খরচ হ্রাস পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রেতারা সহজেই বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের নিকট পৌছাতে পারে যেখানে স্থানীয় বিক্রেতারা একটি অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। শক্তিশালী সার্চ ইঞ্জিন গুগল আপনার ওয়েবসাইটের ঠিকানা নিয়ে আরো বেশি মানুষদের কাছে পৌছে দেয় যেন আপনার বিক্রি বৃদ্ধি পায়, যেটি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) নামে পরিচিত।
ইকমার্স আপনাকে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে
ই-কমার্স ব্যবহারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল অধিক উৎপাদনশীলতা। এর মাধ্যমে কোম্পানি এখন তাদের গ্রাহকদের কাছে সরাসরি পণ্য কিংবা পরিসেবা সরবরাহ করতে পারে, যার ফলে কর্মীরা গ্রাহক পরিসেবার উদ্দেশ্যে কাজ না করে অন্যান্য কাজে মনোনিবেশ করতে পারে। এটি বৃহৎ বাজারে ব্যবসার জন্য বিশেষভাবে উপযোগী কারণ ক্ষুদ্র ব্যবসার বিপরীতে তারা আরও বেশি গ্রাহকদের সেবা দিতে সক্ষম হন।
ই-কমার্স আপনার ব্যবসার অগ্রগতি বাড়ায়
অনলাইনে বিক্রির মাধ্যমে গ্রাহকদের শুধুমাত্র স্থানীয় দোকান থেকেই পণ্য কেনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হয়না। আপনি চাইলে অন্য কোন দেশের গুদাম থেকে সেখানকার মানুষদের জন্য আপনার পণ্য বিক্রি কিংবা সরবরাহ করতে পারেন। এছাড়াও এই অনলাইন ব্যাবস্থা বিশ্বের যেকোন প্রান্ত থেকেই আপনি আপনার ব্যবসা পরিচালনা করার সুযোগ করে দেয়।
ই-কমার্সের সাহায্যে বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে পারেন।
অনেক উদ্যোক্তা বাজারে কোন পণ্যের চাহিদা রয়েছে এবং তাদের ক্রেতাদের সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য সংগ্রহ করতে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। এই তথ্যগুলো কোম্পানির জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর মাধ্যমে তারা আরো সুনির্দিষ্টভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিভাবে তাদের ব্যবসার পরিসর বাড়ানো যায়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের পণ্যে কি ধরণের পরিবর্তন আনলে গ্রাহকরা সন্তুষ্ট হবে কিংবা গ্রাহককে কিভাবে তাদের পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট করা যায় তার হিসেব সহজেই স্বল্পমূল্যে করে ফেলা সম্ভব হচ্ছে, যা পূর্বে সার্ভে কিংবা ফোকাস গ্রুপের সাহায্যে করতে হতো।
এ ধরণের তথ্যের ভিত্তিতে গ্রাহকদের কোন ধরণের পণ্য কেনার অভ্যাস রয়েছে তা সুনির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করা সম্ভব হওয়ার ফলে কোম্পানিগুলো তাদের কার্যক্রম আরো প্রসারিত করতে সক্ষম হচ্ছে।
ইকমার্সের মাধ্যমে আপনার পণ্য সহজেই ক্রেতার হাতের নাগালে পৌছে দেওয়া সম্ভব।
অনেক কোম্পানি তাদের পণ্য কিংবা পরিসেবা বিক্রির জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। বিশ্বব্যাপী ই-কমার্সের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে কোম্পানিগুলোকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নিয়মিত নতুন কিছুর উদ্ভাবন করতে হচ্ছে। ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের আরও অধিক গ্রাহক, মুনাফা এবং আয়ের সুযোগ করে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, বর্তমানে অনেক মানুষ অনলাইনের মাধ্যমে বই কিনে থাকেন যেখানে ২০ বছর আগেও, তাদের কাছে বই কেনার একমাত্র উপায় ছিল কাছের কোন বইয়ের দোকান।
ই-কমার্সের ফলে গ্রাহকদের কাছে সমস্ত ক্ষমতা রয়েছে
ই-কমার্সের ফলে আপনার পণ্য বা পরিষেবাগুলি বিক্রি করার জন্য এখন আর পাইকার বা এজেন্টের মতো মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রয়োজন নেই কারণ এখন সরাসরি আপনি আপনার ওয়েবসাইট থেকে পণ্য গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করতে পারেন। এটির মাধ্যমে সরাসরি আপনার ভোক্তা পণ্য পেয়ে থাকে, যার ফলে পণ্য কেনা তার কাছে আরো সহজলভ্য হয়। উদাহরণস্বরূপ, অনেক হোটেল এখন সরাসরি-বুকিং ব্যবস্থা চালু করেছে যেখানে গ্রাহকরা তাদের পছন্দমতো রুম সেই হোটেলের ওয়েবসাইট থেকে বুকিং করতে পারে। এর ফলে পর্যটন কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে যেসব হোটেল রয়েছে তারা নিজেদের মধ্যে একধরণের প্রতিযোগিতা করে যেন তারা অধিক পর্যটককে তাদের হোটেলের দিকে আকৃষ্ট করতে পারে।
ই-কমার্সের পরিধি দ্রুতই বৃদ্ধি পাচ্ছে যার উদাহরণ ২০১৩ সালে অনলাইনের মাধ্যমে ১,০৩৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার সমমূল্যের পণ্য বিক্রি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন ২০১৪ সালে এটি ৯% বৃদ্ধি পেয়ে ১,২১৩ বিলিওন ডলার সমমূল্যের বাজারে পরিণত হবে।
ই-কমার্সের ফলে এখন আমরা স্বাচ্ছন্দে পণ্য কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারছি, যা পূর্বে সম্ভব ছিলোনা। আগে যেখানে আমাদের নিকটস্থ দোকানের পণ্যগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হতো, ই-কমার্সের বিস্তৃতির ফলে যেকোন যায়গার পণ্য কেনা সম্ভব হচ্ছে এখন। এই ই-কমার্সের বাজার ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর বিশেষজ্ঞদের মত ই-কমার্সের চাহিদা অদূর ভবিষ্যতে হ্রাস পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এটি ধীরে ধীরে গ্রাহক পছন্দের শীর্ষে চলে আসছে এর পণ্যের আধিক্যতার এবং সেবার মানের জন্য।
মোবাইলে ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং মোবাইলের মাধ্যমে পণ্য কেনার প্রবণতা গণমানুষের কাছে অনলাইন শপিংকে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় করে তুলছে।